মার্কো আসেনসিও করলেন হ্যাটট্রিক, জোড়া লক্ষ্যভেদে দলের হয়ে দুইশ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করলেন করিম বেনজেমা। বদলি নেমে ইসকোও দেখলেন গোলের মুখ। তাদের সম্মিলিত নৈপুণ্যে মায়োর্কার জালে গোল উৎসব করল রিয়াল মাদ্রিদ। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে লা লিগার ম্যাচে ৬-১ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লা লিগায় আগের দুই ম্যাচে জিততে যথেষ্ট ভুগলেও এই ম্যাচে রিয়াল ছিল দুর্দান্ত।

তাদের আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে সফরকারীরা যেন ছিল অসহায়। দুই অর্ধে তিনটি করে গোল হজম করে মায়োর্কা। ম্যাচে ৫৯ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য রিয়াল শট নেয় মোট ১৮টি, যার ১২টি লক্ষ্যে। মায়োর্কার ১৭ শটের পাঁচটি লক্ষ্যে ছিল। ঘরের মাঠে তৃতীয় মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল। মার্তিন ভালিয়েন্তের ব্যাকপাস নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে বল হারান হোসেফ গায়া। সুযোগটা কাজে লাগান কাছেই থাকা বেনজেমা। ছুটে গিয়ে বল ধরে বাকিটা অনায়াসে সারেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার।

সপ্তম মিনিটে একটুর জন্য ‘অলিম্পিক গোল’ পাননি আসেনসিও। তার কর্নার গোললাইন থেকে কোনোমতে ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক মানোলো রেইনা। রিয়ালের আক্রমণের ঝাপটা সামলে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল মায়োর্কা। তবে তাদের হতাশায় ডুবিয়ে ২৪তম মিনিটে ব্যবধান ২-০ করে ফেলেন আসেনসিও। রদ্রিগোর শট কোনোমতে পা দিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক। বিপদমুক্ত করতে পারেননি, ফিরতি বল অনায়াসে জালে পাঠান রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। পরের মিনিটেই ব্যবধান কমিয়ে ফেলে মায়োর্কা।

দ্বিতীয় গোলটির পর খেলা শুরু হলে একটু আয়েশীই হয়ে পড়েছিল রিয়াল। সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে বল জালে পাঠান লি ক্যাং-লি। তেমন কিছু করার ছিল না থিবো কোর্তোয়ার। ২৯তম মিনিটে আবার ব্যবধান বাড়ান আসেনসিও। মাঝমাঠ থেকে এদের মিলিতাও খুঁজে নেন বেনজেমাকে। ফরাসি ফরোয়ার্ড প্রথম স্পর্শে বল বাড়ান আসেনসিওকে। ঠিকানা খুঁজে নিতে তেমন কোনো সমস্যাই হয়নি তার। ছয় মিনিট পর হ্যাটট্রিক হয়েই যাচ্ছিল আসেনসিওর।

বেনজেমার কাছ থেকে বল পেয়ে শট নিলেও সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে এড়াতে পারেননি তিনি। হাতছাড়া হয় দারুণ একটি সুযোগ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বল জালে পাঠান বেনজেমা। তবে রদ্রিগোর ক্রস নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে তিনি প্রতিপক্ষের একজনকে ফাউল করায় ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোল দেননি রেফারি। তবে গোলের জন্য স্বাগতিকদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।

বেনজেমার কাছ থেকে বল পেয়ে ৫৫তম মিনিটে বল জালে পাঠান আসেনসিও, হয়ে যায় হ্যাটট্রিক। মায়োর্কার কেউ রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কিংবা বলকে আক্রমণ করতে চায়নি। যথেষ্ট সময় পাওয়া আসেনসিও দেখেশুনে ডি-বক্সের বাইরে থেকে আড়াআড়ি শটে জাল খুঁজে নেন। সৌভাগ্যের এক গোলে ৭৮তম মিনিটে স্কোরলাইন ৫-১ করে ফেলেন বেনজেমা। মাঝমাঠ থেকে ডাভিড আলাবার বাড়ানো বল তার পিঠে লেগেও কাছাকাছিই পড়ে। সঙ্গে লেগে থাকা মায়োর্কার দুই খেলোয়াড় বল কেড়ে নিতে পারেননি। উল্টো বেনজেমার শট তাদের একজনের পায়ে লেগে একটু দিক পাল্টে জড়ায় জালে। কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষকের।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এটি বেনজেমার দুইশতম গোল। লা লিগার চলতি আসরে অষ্টম। ৮৪তম মিনিটে স্কোরশিটে নাম লেখান ইসকো। নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো বল ধরে দারুণ গতিতে এগিয়ে যান ভিনিসিউস। একটু দুরূহ কোণ থেকে শট না নিয়ে তিনি খুঁজে নেন ডি-বক্সে অরক্ষিত ইসকোকে।

অভিজ্ঞ এই মিডফিল্ডারের স্রেফ একটা টোকা দরকার ছিল। শেষ দিকে লুকা ইয়োভিচের দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিক ফিরিয়ে ব্যবধান আর বাড়তে দেননি মায়োর্কা গোলরক্ষক। ৬ ম্যাচে পাঁচ জয় ও এক পয়্টে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ফিরেছে রিয়াল। সমান ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে শিরোপাধারী আতলেতিকো মাদ্রিদ। ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে আট নম্বরে রয়েছে বার্সেলোনা।